দায় এড়াতেই কি হিসেবে জল? দু’বছরের শ্রম সমীক্ষায় শিশু শ্রমিক মাত্র ৪৯ জন

২০০১ সালের জনগণনা রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে আট লক্ষ। বিগত ১০ বছরে সেই সংখ্যাটা বেড়ে অন্তত ১০ লক্ষ হয়েছে বলে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মত। অথচ রাজ্যের শ্রম দফতর ২০০৭ ও ’০৮— দু’বছরে অসংখ্য বার অভিযান চালিয়ে সাকুল্যে নাকি ৪৯টি শিশু শ্রমিকের সন্ধান পেয়েছে!

শ্রম দফতরের ২০০৮ ও ’০৯ সালে প্রকাশিত রিপোর্টেই এই তথ্য উঠে এসেছে।

রাজ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সত্যিই এতটা কমে গিয়েছে কি? সংখ্যাটা এতখানি কমে গিয়ে থাকলে কোন জাদুমন্ত্রে সেটা সম্ভব হল?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহু। তবে তাঁর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, নানা ক্ষেত্রে শিশু শ্রমিকের উপস্থিতির কথা জেনেও তাদের উদ্ধার করার ব্যাপারে রাজ্য সরকার তৎপর নয়।

কেন সেই তৎপরতা নেই?

শ্রমমন্ত্রী বলেন, “শিশু শ্রমিক চিহ্নিত করার জন্য যদি বেশি অভিযান চালানো হয়, তা হলে বলা হবে শ্রম দফতর ‘ইনস্পেক্টর রাজ’ চালাচ্ছে।”

তা হলে শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার বা পুনর্বাসনের কী হবে? মন্ত্রী জানান, উদ্ধার করা শিশু শ্রমিকদের জন্য এ-পর্যন্ত ছ’টি জেলায় আবাসিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তাদের নিখরচায় থাকা, খাওয়া, পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। সব জেলায় অন্তত একটি করে আবাসিক বিদ্যালয় গড়ার কাজ হাতে নিয়েছে শ্রম দফতর।

অনাদিবাবুর মতে, শিশু শ্রমিক গোটা দেশের সমস্যা। আর্থ-সামাজিক কারণেই এই কলঙ্কের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও একটি রাজ্যের শ্রম দফতরের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। শ্রমমন্ত্রী মনে করেন, দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না-হলে এই সমস্যা বেড়েই চলবে।

কিন্তু শ্রম দফতর রাজ্যের অসংখ্য শিশু শ্রমিকের হদিস পায় না কেন, স্বভাবতই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। তাদের মতে, রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য শুধু অবিশ্বাস্য নয়, হাস্যকরও বটে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী রশ্মি ঝা বলেন, “কেবল বারাসত-২ নম্বর এবং হাড়োয়া ব্লকের ৪৭টি ইটভাটাতেই কাজ করে কমবেশি চার হাজার শিশু শ্রমিক। রাজ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইটভাটা রয়েছে। এবং অধিকাংশ ইটভাটাতেই আছে শিশু শ্রমিক।” এ ছাড়া বাজি কারখানা, চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, চা-বাগান, চাষের মাঠ, মোটর গ্যারাজ, চামড়া কারখানা— সর্বত্র সহজেই দেখা মেলে শিশু শ্রমিকদের।

অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী নব দত্তের মতে, সরকার ইচ্ছে করেই সংখ্যাটা কমিয়ে দেখায়। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শিশু শ্রমিককে মুক্ত করে তাদের পুনর্বাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। এই দায়িত্ব পালন করতে গেলে রাজ্য সরকারকে প্রতিটি শিশু শ্রমিক-পিছু ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। “সেই কারণেই সরকারি কর্মীরা হাজার অভিযান চালিয়েও শিশু শ্রমিক খুঁজে পান না,” বললেন নববাবু।

সুকান্ত সরকার • কলকাতা

http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=28raj2.htm

Leave a comment

Filed under Child Rights and Protection

Leave a comment